স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার । কিভাবে নিজের স্তন নিজেই পরিক্ষা করবেন
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন আর অসচেতনতা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে স্তন ক্যান্সারের । যার পরিণতি ভয়াবহ । তাই স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয়করা গেলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
স্তন ক্যান্সার এক নীরব ঘাতক। আন্তর্জাতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্তন ক্যান্সার ।
* দেরিতে বিয়ে
* সন্তানধারণ না করলে
অথবা সন্তানকে বুকের দুধ পান না করালে ঝুঁকি বাড়ে এ রোগের ।
শরীরের অন্যান্য স্থানের মতো স্তনে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে পিণ্ড বা চাকার মতো সৃষ্টি হলে তাকে টিউমার বলে । এই টিউমার যদি উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে এবং কাছের বা দূরের অন্য কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত না করে তবে তাকে বলে বিনেইন টিউমার বা অক্ষতিকারক ডিউমার। আর যদি উৎপত্তি স্থল সীমা ছাড়িয়ে আশেপাশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও আক্রান্ত করে এবং রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে দুরের অঙ্গেও আঘাত হানে তবে তাকে বলে ক্ষতিকারক বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার । স্তনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই স্তন ক্যান্সার নামে পরিচিত । একটি পিন্ড বা চাকা হিসেবেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ধরাপড়ে ।ধীরে ধীরে বড় হয় এবং রক্ত লসিকা নালীর মাধ্যমে প্রথম বগল তলায় এবং পরে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ-এরঊর্ধ্বে দেরিতে বিয়ে হলে কিংবা ত্রিশ বছর বয়সে সন্তান গ্রহণ করলে, সন্তানকে বুকের দুধ পান না করালে এবং মায়ের স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে অথবা খালা, ফুফু কারো স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এছাড়াও অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক পরিশ্রমে অনভ্যস্ততা, চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ইত্যাদিও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ।ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হলো স্তনে চাকা বা পিণ্ডর মতো কিছু মনে হয় । এ কোন ব্যথা থাকে না এবং এটি শক্ত হয়। স্তন নিপল ভেতরের দিকে চলে যায় ওটা দিয়ে রক্তক্ষরণ বা অস্বাভাবিক রস নিঃসৃত হয়, চামড়া কুঁচকে যায়।
স্তনে চাকা না থাকলেও কাছাকাছি থাকলে সেটাও ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ।
উল্লেখ্য চাকা মানেই কিন্তু ক্যান্সার না । চাকা টা যদি শক্ত হয় নড়াচড়া কম করে চামড়া কুঁচকানো থাকে নিপল ভেতরে ঢুকে যায় এবং চাকার মধ্যে কোন ব্যথা না থাকে তাহলে এটাকে ব্রেস্ট ক্যান্সারে বলে ধারণা করা যায়।
পুরুষের ক্ষেত্রেও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে তবে সম্ভবনা অনেক কম মাত্র এক পারসেন্ট । পুরুষদের ক্ষেত্রে লক্ষণ মহিলাদের মতই।
একটি জিনিস ভাল ভাবে মনে রাখা দরকার যে স্তন ক্যান্সার কিন্তু ব্যাথা দিয়ে শুরু হয় না। লক্ষণ দেখা দিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া উচিৎ। প্রথমিক অবস্থায় এ রোগ নির্ণয় করতে পারলে এ রোগের চিকিৎসা খুবই সহক এবং রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
কিভাবে নিজের স্তন নিজে পরিক্ষা করবেনঃ
20 বছরের উপর প্রত্যেক মহিলারই নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত । কোন পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা চেক করা কে বলা হয় স্কিনিং ।
স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য রয়েছে প্রধান তিনটি পদ্ধতিঃ
* বেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন
* ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন
* আলট্রাসনোগ্রাম বা মেমোগ্রাম
নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন এটিই ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন । মাসিক শেষ হবার পরের দিন অথবা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেক মহিলা নিয়মিতভাবে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন - কোনো চাকা বা অসামঞ্জস্য আছে কিনা।
যে পদ্ধতিতে পরীক্ষাটি করবেন তা হচ্ছে - আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাতের তালু রেখে নিচের দিকে সজোরে চাপ দিন যাতে বুকের মাংস পেশীতে টান পড়ে । লক্ষ্য করুন স্তনের আকৃতিতে কোন পরিবর্তন পড়েছে কিনা । দুই হাত উপরে তুলে ধরুন এবং একই জিনিস আর মনোযোগ দিয়ে প্রত্যক্ষ করুন ।
এবার বিছানায় শুয়ে এক পাশে কাঁধের নিচে বালিশ এবং সে পাশের মাথার নিচে ঐ পাশের হাত রেখে আর হাতের সব আঙ্গুল একসাথে মিলে অগ্রভাগ দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে ছোট ছোট চক্রাকারে পরীক্ষা করুন কোন চাকা বা স্তনের আকৃতি পরিবর্তন হয়েছে কিনা । বগল পরিক্ষা করুন কোন চাকা আছে কিনা দেখার জন্য । এর পর স্তন বিন্তে চেপে ধরে দেখুন কোন হরণ হয় কিনা।
প্রতি মাসে পিরিয়ড বন্ধের একদিন পর এভাবে চ্যাট করুন যাদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে অর্থাৎ এ যারা মেনোপজ কন্ডিশনে পৌঁছে গেছেন তারা মাসের যেকোন একটি দিন নির্দিষ্ট করে নিন এর পরীক্ষার জন্য । স্তনে অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এতে চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী স্তন পরীক্ষা করে দেখবেন । আগেও বলেছি যে কোনো পিণ্ড মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয় । তাই অনেকে ডাক্তারের চেম্বারে স্তনে ক্যান্সার হয়েছে তা জানার জন্য ভিড় জমায়
কিন্তু ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হবার সময় হাসিমুখে নিশ্চিন্ত মনে বিদায় নেয়।
চিকিৎসক কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলে আলট্রাসনোগ্রাম বা মেমোগ্রাম করার জন্য সাজেস্ট করেন। সাধারণত 35 বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাম এবং যাদের বয়স 35 বছরের উপরে তাদের জন্য মেমোগ্রাম অভিজ্ঞ চিকিৎসরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন । যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে ক্যান্সার হয়েছে তা হলে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসার দিকে অগ্রসর হন।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য যা করা উচিত তা হলোঃ
* বিয়ের বয়স হবে যথাসম্ভব দ্রুত বিয়ে করা
* 30 বছরের আগে গর্ভধারণ করা
* শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো
* নিয়মিত পরিমিত আহার ও হালকা ব্যায়াম করা
* চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া
* টাটকা শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া
মনে রাখবেন প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা শতভাগ।
নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা অভ্যাস গড়ে তুলুন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Post a Comment