আমিও চাই, কেউ আমায় কেয়ার করুক, ভালোবাসুক, গুরুত্ব দিক: মৌসুমী হামিদ
দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র ‘১৯৭১ সেইসব দিন’। হৃদি হক পরিচালিত এই ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী হামিদ। রোববার দুপুরে ছবিটি নিয়ে কথা হয় প্রথম আলোর সঙ্গে। ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আরও নানা প্রসঙ্গে কথা হলো
কেমন আছেন?
খুবই ভালো। খুবই ভালো। খুবই ভালো। কারণ, সিনেমা রিলিজ হয়েছে। সবাই প্রশংসা করছেন। সুবর্ণা আপা (সুবর্ণা মুস্তাফা) আমাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মৌসুমী হামিদ রিমেইনস উইথ মি, সি ওয়াজ সো গুড’। এমন পোস্ট দেখার পর থেকে আমি খুবই হ্যাপি। সুবর্ণা আপা আমার নাম উল্লেখ করে যা লিখছে, তা পড়ার পর আমার মতো অভিনেত্রীর এক জীবনে আর কী লাগে।*সুবর্ণা মুস্তাফার মতো একজন অভিনয়শিল্পীর কাছ থেকে এমন অনুপ্রেরণাদায়ী কথা শোনাটা কতটা আনন্দের। একই সঙ্গে কতটা দায়িত্বের চাপ মনে করছেন?
আমার অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে কতটা আনন্দিত আমি। এমনিতে সুবর্ণা আপাকে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। এর আগে যারাই আমাকে যতবারই জিজ্ঞেস করেছে, কাকে আদর্শ মানি? সব সময় সুবর্ণা মুস্তাফার নাম বলেছি। তাঁর সঙ্গে সব জায়গা দেখা হয়, কথাও হয়। তাঁকে আমি অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি, শ্রদ্ধার কারণে দূরত্ব বজায় রাখি। দূর থেকে ভালোবেসে যাই। সেই মানুষটা আমাকে নিয়ে আলাদাভাবে কিছু বলেছেন, এটা অনেক অনেক বড় ব্যাপার। অভিনয়জীবনে অনেক বড় অর্জন। একধরনের ভয়ও লাগছে যে বোঝা গেল সুবর্ণা আপা বেশির ভাগ কাজই দেখেন। এটাও দেখেছেন। নেক্সট ভালো কোনো কাজ করলে সেটাও দেখবেন। তার মানে সুবর্ণা আপা দেখছেন, মানে আই নিড টু বি মোর কেয়ারফুল। কোনো উচ্চারণ ভুল হলে তো সঙ্গে সঙ্গে বলে দেন। আমি এটাকে একধরনের ব্লেসিংস, গাইডেন্স বলব।
click here : https://aklimaadmedia.blogspot.com/2024/05/fashion-mens-sports-watches-men.html
তাঁর সঙ্গে কখনো স্ক্রিন শেয়ার করা হয়েছে?
আমার বহুদিনের স্বপ্ন, তাঁর সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করার। আর সেটা হবে আমার শেখার সবচেয়ে বড় সুযোগ। কারণ, তাঁকে আমি সবচেয়ে বেশি আদর্শ মানি। তাঁকে অভিনয়শিল্পী এবং ব্যক্তিত্বের কারণে অন্ধভাবে আদর্শ মানি। এখনো পর্যন্ত যেভাবে ব্যক্তিত্বটা বহন করে চলছেন, সেটা অনেক বেশি শিক্ষণীয়।
আপনি কি শুটিংয়ে?
সকালের ফ্লাইটে আজ (রোববার) যশোরে আসছি। দুই দিনে কাজ শেষ হবে। উৎসবে জমা দেওয়া জন্য শর্টফিল্ম। মার্ডার অব পলিটিকস নামের এই ফিল্মের পরিচালক এম ডি পিকু হাসান, সে অমিতাভ রেজার সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। এই ফিল্মে আমার সহশিল্পী সুজন হাবিব।
ঢাকায় ফিরবেন কবে?
দু–তিন দিনের কাজ। শুটিং শেষ করে বাবা–মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যশোর থেকেই সাতক্ষীরা চলে যাব।
যশোর থেকে সাতক্ষীরা কাছে, তাই সুযোগটা মিস করতে চাইছেন না?
বিষয়টা মোটেও তা না। আমার মন খারাপ থাকলে মা–বাবার কাছে ছুটে যাই। মন ভালো থাকলেও যাই। সময় সুযোগ পেলেই দৌড় দিই।
খুব আনন্দ নিয়ে যান মা–বাবার কাছে। ঢাকায় ফেরার সময় কেমন লাগে?
আমি যখন বাড়ি থেকে বের হই, আব্বু–আম্মু দুজনই রাস্তা পর্যন্ত আসেন। আব্বু তো অনেকক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু আমি কখনো পেছনে ফিরে তাকাই না। ১৩ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে। ইন্টারমিডিয়েট খুলনার আজম খান কমার্স কলেজে পড়ার সময় প্রথম বাড়ির বাইরে আসা। এর পর থেকে যখনই বাড়ি যাই, ফেরার সময় এমন আবেগময় দৃশ্য তৈরি হয়।
ঢাকা থেকে বাড়ি গেলে মা–বাবা কী বলেন?
বাড়ি গেলে মা–বাবা বলেন বিয়ে করো। বিয়ে করো। বিয়ে করো। পাঁচ–ছয় বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। আমিও তখন বলি ওকে, আচ্ছা করব। আচ্ছা করব। আচ্ছা করব তো।
তার মানে মা-বাবার চাওয়া সত্যি সত্যি পূরণ করতে যাচ্ছেন?
পূরণ তো করতে চাই। কিন্তু বিয়ে করাটা তো কঠিন সিদ্ধান্ত।
কেন কঠিন মনে হয়?
জানি না কেন। কিন্তু এটা কঠিন সিদ্ধান্তই মনে হয়।
নিজের আশপাশের কোনো সম্পর্ক কি আপনাকে ভাবায়?
এটাও বুঝতে পারি না। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি, আই নিড সামওয়ান রেসপনসিবল। এমন কাউকে চাই, যে আমার যত্ন করবে। আর কতকাল আমি একাই সবার কেয়ার করতে থাকব। আমিও চাই, কেউ আমায় কেয়ার করুক, ভালোবাসুক, গুরুত্ব দিক। কেউ আমার চেয়ে মানসিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ভালো হবে। সত্যি বলতে, মানসিকভাবে শক্তিশালী একজনকে লাগবে, যে আমার চেয়েও ভালো। কিন্তু পাচ্ছি না তো সে রকম কাউকে।
যত দূর জানি, আপনি একাধিক প্রেমের সম্পর্কেও ছিলেন। সেখানে কেউ আপনার মনের মতো ছিল যত দূর জানি, আপনি একাধিক প্রেমের সম্পর্কেও ছিলেন। সেখানে কেউ আপনার মনের মতো ছিল না?
আমার কাছের মানুষেরা জানেন আমার প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারে। কখনোই কোনো রাখঢাক রাখিনি। এই সম্পর্কের কারণে আমার কোনো টাকাপয়সাও জমা হয়নি। আমি সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক বেশি বিশ্বস্ত ছিলাম। একটা সময় মনে হয়েছে, সম্পর্কগুলোতে কেউই আমার ছিল না। আমার তো মনে হয়েছে, তাঁরা আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিল আবার ছিলও না।
কেন?
আমার মনে হয় প্রতিটি সম্পর্কে স্রষ্টার ইশারাও থাকতে হয়। আমি তো কম চেষ্টা করিনি। এখন হয়তো আপনারা শুনবেন, হুট করেই বিয়ে করে ফেলেছি। তবে আমি সব সময় চেষ্টা করছি প্রেমের সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখতে। আমি কখনোই ওই রকম ব্যাড গার্লফ্রেন্ড না। আন্ডারস্ট্যাবল গার্লফ্রেন্ড। আমি মোটেও আমি ডিমান্ডিং গার্লফ্রেন্ড না। আমি কখনোই কোনো বয়ফ্রেন্ডকে বলিনি, আমাকে এটা দাও, ওটা দাও। বরং আমি চেষ্টা করেছি। কারণ, আমিও তো আয় করি। চেষ্টা করেছি সম্পর্কে অবদান রাখার।
তাহলে প্রেমের সম্পর্কগুলো ভাঙার পেছনে কী কারণ ছিল?
আমি মিথ্যা কথা বলাটা একদমই পছন্দ করি না। অসততা মোটেও সহ্য করতে পারি না। সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই এটা ঘটেছে।
প্রতিটি সম্পর্কে কি এ রকম হয়েছে?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রেমের সম্পর্কের শুরুতে আমরা বেশ উদ্যমী থাকি। দুজনই থাকি। যখন এটা সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রশ্ন আসে, তখন সবাই গড়িমসি শুরু করে। একটা প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, মিডিয়ার মেয়েরা খারাপ। মিডিয়ার মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করা যাবে, ঘোরাফেরা করা যাবে। আড্ডা দেওয়া যাবে, বন্ধুত্ব করা যাবে কিন্তু বিয়ের মতো সম্পর্ক স্থাপন করে দায়িত্ব নেওয়া যাবে না! ভাবতে পারেন অদ্ভুত একটা মানসিকতা পোষণ করি আমরা। আমি আমার চারপাশে এসব দেখেছি। এমনকি আমি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের চেষ্টা করেও দেখছি, মিডিয়ার বাইরের মানুষের মধ্যেও এই ধারণা রয়েছে। সবার প্রথম কথা হচ্ছে, মেয়েটা মিডিয়ায় কাজ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখেছি, নিজেরাই সাহস পায় না পরিবারকে বলতে। হয়তো বলতে চায়ও না। আরেকটা কথা, একটা পর্যায়ে দায়িত্বের প্রশ্ন এলেই বলে বসে, ফ্যামিলি মানছে না।
পরিবার মানছে না, এটা কি সম্পর্ক স্থাপনের শুরুতে তাদের মনে থাকে না?
এটাই তো সবচেয়ে বিরক্তিকর। আমি সব সময় নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করে নিই। আমি সব সময় চেয়েছি সম্পর্কের পরিণতি। এসব বলার সময় তারাও বলত—তুমি আমার জান, ময়না, সোনা, বাবু, টিয়া কত কী। প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের শুরুতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর নেবে, বাবু খাইছ। সোনা, ময়না আরও কত কী। অথচ প্রেমের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর, দুই বেলার মধ্যে এক বেলাও খাইছি কি না খবর নেয় না। একটা সময় মনে হয়, এসবের গুল্লি মারি। একটা সাধারণ কথা, পরিবার চাইছে না কী করব! এসব শুনলে খুব অসম্মানিত লাগে।
যত দূর জানি, আপনার প্রতিটি সম্পর্কই আপনার অঙ্গনেরই মানুষ। তাঁরা কেন এমনটা করল?
বাইরে থেকে যতই আমরা আধুনিক মনে করি, ওরাও টিপিক্যাল পুরুষ মানুষ। বিশ্বাস করেন আমি দেখেছি, তাদের মধ্যে নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে শ্রদ্ধা কাজ করেনি!
সম্পর্ক না টেকা নিয়ে মন খারাপ লাগেনি?
প্রতিটি সম্পর্ক আমাকে পরিণত করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে মানুষগুলো ঢাকা শহরে একা একা ফাইট করে নিজেদের তৈরি করে, সেই মানুষগুলোকে বাইরে থেকে অনেককে সাহসী সাহসী বলে, হাততালি দেয়। এই মানুষগুলোকেই যখন রিজেক্ট করতে চায়, তখন প্রথম কারণ দেখায়, ও তো ঢাকায় একা একা থাকে। এটা আমার কাছে খুব শকিং লাগে। একটা মেয়ের ঢাকা শহরে একা থেকে ফাইট করে প্রতিষ্ঠিত হওয়াটার মধ্যে দোষ খোঁজা হয়, এই আধুনিক সমাজেও। এটা আমার অভিজ্ঞতা।
আমি খুবই আহত হই। কারণ, আমি তো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। একটা ছেলে ঢাকায় একা থেকে সারভাইভ করলে, প্রতিষ্ঠিত হলে অনেক বড় কিছু। উল্টো দিকে একা থেকে মেয়েটা প্রতিষ্ঠিত হলে কত কি ভাবি আমরা! আমাদের সামাজিক কাঠামোটাই এমন হয়ে গেছে। এদিকে আমাদের অঙ্গনে একটি মেয়ের বয়স ত্রিশের ওপরে হয়ে গেছে, ও বিয়ে করছে না কেন—বেশির ভাগ মানুষের এ প্রশ্ন থাকে। আমিও অনেকবার শুনেছি, আমি বিয়ে করছি না কেন! কত কত কাজ করি আমরা, সেসব নিয়ে কথা না বলে ব্যক্তিগত প্রশ্নটাই বেশি। এখন আরেকটা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, ফেসবুক–ইউটিউবের কারণে। দেখা গেল অনেক কথা বললাম, ওসবে না গুরুত্ব দিয়ে ভিডিওর একটা অংশ কেটে চটকদার হেডিং দিয়ে ছেড়ে দিল। মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়ে গেল। শিল্পীর কী হলো, তা নিয়ে কেউ ভাবছে না। যার বেশি ভিউ হচ্ছে, তাকে বেশি গ্রহণযোগ্যও ভাবা হচ্ছে! এক যুগ আগে যখন আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আসছিলাম, তখন কাজের কথাই বেশি হতো।
আমরা আবার কাজের প্রসঙ্গে আসি। ‘১৯৭১: সেইসব দিন’ চলচ্চিত্রের জন্য সুবর্ণা মুস্তাফা নাহয় তাঁর মতামত ব্যক্ত করলেন। আপনার কাছে কী মনে হয়, এই ছবিটা আপনার অভিনয়জীবন কতটা সমৃদ্ধ করেছে?
এখন তো সিনেমার একটা ভালো সময় যাচ্ছে। ‘পরাণ’, ‘দামাল’, ‘হাওয়া’ ভালো চলেছে। কয়েক মাস ধরে ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রহেলিকা’ ও দারুণ চলছে। দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও চলছে। প্রত্যেক পরিচালক তাঁর নিজস্ব ঢংয়ে একটা গল্প বলার চেষ্টা করছেন। সে রকম হৃদি হক আপু তাঁর নিজস্ব ঢংয়ে একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। এই গল্পটা একটু ভিন্ন। সেটার সঙ্গে বাঙালির সবচেয়ে বড় আবেগ, মুক্তিযুদ্ধ জড়িয়ে আছে। হৃদি হকও তো একজন কিংবদন্তির সন্তান। এত দিন থিয়েটার করেছেন, নাটক, টেলিছবি বানিয়েছেন। তাঁর পুরো পরিবার এই অঙ্গনেরই। পরম্পরা অভিনয় সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। তিনি যতটা সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিকভাবে, এই আমি তাঁর সংস্পর্শে এসে যে একটা কাজ করতে পেরেছি, এটা আমার জন্য বড় ব্যাপার। এত দিন তো আমার অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে, কোনো ছবি নিয়ে তো সুবর্ণা আপার মতো অভিনয়শিল্পী কিছু বলেননি। এই সিনেমা নিয়ে লিখছেন। সো আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি।
আরও দুটি ছবির কাজ তো শেষ হয়ে আছে। নতুন ছবির কাজের খবর বলুন।
‘নয়া মানুষ’ সিনেমা শুটিং–ডাবিং শেষ। ‘যাপিত জীবন’–এর কাজও শেষ। একটা চমৎকার গল্পের নতুন কাজ আসছে। সবার কাছ থেকে শুভকামনা চাইছি, সব চূড়ান্ত হোক। কারণ, এখনই এটা প্রকাশ করতে পারছি না।
Post a Comment